স্যার ফুল নিবেন, ঈদের জন্য একটা ফুল মাত্র ৫ টাকা বলেই যাচ্ছে নিপা । গাড়ির জানালার কাঁচ দিয়ে খান
সাহেব এক দৃষ্টিতে দেখছেন তা ঘামে ভেজা শার্টের পকেটের দিকেও ফিরে তাকাচ্ছেন বারবার।
নিশ্চুপ কথা বলছে না সে আজ মেয়েটির জন্য সাহেবের অনেক মায়া হচ্ছে কিন্তু ৫০০ টাকার নোট ছাড়া তো খুচরো কোন টাকা নেই ।
পাশের সিটে মিসেস না থাকলে হয়তো নিপার হাতের সব ফুল কিনে বিএম ডব্লিউ গাড়িকেই বাগান বানিয়ে ফেলতেন।
ঈদের বাকি আর বেশীক্ষন নেই, সন্ধ্যা রাতে ডুপ্লেক্স বাসার ব্যলকনিতে চাঁদ উঠলেই কাল ঈদ তাই একমাত্র বউ আর ৬ বছরের নাদুস নুদুস বাবুর কাপড়
কিনতে বসুন্ধরা সিটির দিকে যাত্রা শুরু করেছে খান সাহেবের বিশাল বাজেট এর পকেট, স্বল্পদৈর্ঘ্য যাত্রা বিলম্বিত
হচ্ছে ঢাকা শহরের তথাকথিত জ্যাম
এর কারণে
তার সাথে এই মুহূর্তে কম্পিটিশন
করছে ভ্যাপসা গরমের স্পেশাল ঘাম পেট্রোল ডিজেলের গাড়িতে লোডশেডিং হবার কথা নয়, তবুও ঘামছেন খান সাহেব, টিস্যু পেপার দিয়ে দিয়ে মুখ পরিষ্কার করছেন আর বারবার তাকাচ্ছেন নিপার দিকে
প্রচণ্ড রোদেও নিপা ঘামছে না নিপার শরীরে কাপড় নেই তাই মনে হয় সে ঘামতে পারছে না ।
“কি ব্যাপার? দশ, বিশ টাকা দিয়ে বিদায়
করে দিচ্ছো না কেন?” মিসেস খান চিৎকার করে উঠলেন, ওনার
চেঁচামেচিতে বাবুর হাতের আইসক্রিম পড়ে যায় কাপড়ের উপর মিসেস খান এখন চিন্তিত হয়ে পড়লেন ছেলের কাপড় নিয়ে, ছেলেকে নিয়ে এই
কাপড়ে শপিং করা যাবে না, ছেলের জন্য এখন অতিরিক্ত আরেক সেট কাপড় কিনতে হবে ২০,০০০
টাকার বাড়তি বাজেটও খান সাহেবের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাড়িয়ে দেয়া হবে এ বিষয়ে সন্দেহ নেই
তবুও আক্ষেপ লন্ডনের ওয়েস্টফিল্ড
রেখে ঢাকায় এই গরম আর জ্যামের
মধ্যে শপিং করছেন বলে ।
খান সাহেব তার ড্রাইভার কে ইশারা দিলেন ফুল বিক্রেতা নামক টাইটেল
ওয়ালী পথশিশুকে কিছু টাকা দিয়ে দেওয়ার জন্য।
পঞ্চাশ টাকা পেয়ে নিপা বেজায় খুশি,
সে ভেবে উঠতে পারছে না কি করবে?
ছোট ভাইয়ের জন্য ফুটপাত থেকে শখের হাওয়াই মিঠাই আর বেলুন কিনবে, নাকি ভ্যান গাড়ি থেকে একটা পুরাতন জামা কিনবে, টাকা বাঁচলে হয়তো ঈদের দিন শিশুপার্কে ও যাওয়া যাবে সে খান সাহেবের মত এত সহজ করে হিসেব মেলাতে পারেনা ।
৫ টাকা পেলে হয়তো হিসেব সহজ
হয়ে যেত, পাউরুটি আর কলা খেয়ে রাতটি নিশ্চিন্তে পার করে দেয়া যেত আজ নিপা খুব খুশি
খান সাহেবের মত লোকেরা দয়া নামক
যে উচ্ছিষ্ট তাদের কে দেয় তাতেই
তারা সন্তুষ্ট..
কষ্ট হয় কখন যানেন যখন একটা শিশুর
জীবনকে গড়ে তোলার জায়গায় এভাবে নষ্ট হয় ঘৃণা হয় রাজনৈতিক
নেতা এবং মানবাধিকার রক্ষা কারী নামক সংগঠন গুলোর প্রতি যখন তারা সব জেনেও চুপ করে বসে থাকে কারণ এরা যে তাদের ভোট দেবে না তার সংগঠন গুলোকে
করুণা হয় সেই ৩০লক্ষ শহীদদের আত্নত্যাগের প্রতি কারন যে দেশের
মানুষের স্বাধীনতার জন্য তারা প্রাণ
দিয়েছিল সেই মানুষেরা আজ নেতাদের নিকট পরাধীন তাই আজ
তাদের মতামত প্রদানের অধিকার টুকুও লুন্টিত
আজও চালানো হয় অসহায় শিশুদের প্রতি নির্যাতন সেই স্বদেশি বাঙ্গালিদের দ্বারা এর থেকে হয়তো পাকিস্তানিদের
নিকট পরাধীন থাকাই ছিল শ্রেয় কারণ তাদের পাষাণময় মনেও শিশুদের জন্য কিছু দয়ামায়া ছিল
আজ সত্যিই দেশের অবস্থা দেখে বলতে ইচ্ছা হয়
আমি লজ্জ্বিত আমি বাঙ্গালি
আমি লজ্জ্বিত কারণ আমি এমন জাতির অংশ যে জাতি শুধু সহ্য করতে জানে প্রতিবাদ নয়
তাই হয়তো বারে বারে এজাতি অন্যের
হাতে হয়েছে শাষিত, পরাস্ত আর স্বজাতি জাত ভাইদের নিকট নিপীড়িত
কথাগুলো খারাপ লাগলে...
ক্ষমা প্রার্থনা করছি
Post a Comment